কয়েকদিন
আগে ফেইসবুকে "নারী স্বাধীনতা বনাম পুরুষতান্ত্রিক সমাজ" নিয়ে একটা
স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমার একবোন এটা পড়ে আমাকে ইনবক্স করল। তার মতে আমাদের
দেশে নারী স্বাধীনতা বলে কোন বিষয় নেয়। তার মতে নারী স্বাধীনতা শুধু
পশ্চিমা দেশগুলোতে দৃশ্যমান।
আজকের লেখাটা আমার বোনটার জন্য।
অধিকার কেউ কাউকে দেয়না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়।
গনতন্ত্রের প্রাচীনতম উদাহরণ বলতে আমরা বুঝি গ্রীসের এসেম্বলি বা রোমের সিনেট বা ভারতের পঞ্চায়েত। অথচ এসবের মধ্যে ক্রীতদাসের মত নারীদেরও কোন ভোটাধিকার ছিলনা। সপ্তদশ হতে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ প্রবর্তিত এবং প্রতিষ্ঠিত আধুনিক গনতন্ত্রেও নারীর কোন রাজনৈতিক অধিকার ছিলনা। অবশেষে সভ্য ইউরোপে অনেক মেয়ের হাজতবাস, পুলিশের পিটুনি ও অনশন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ১৯১৮ সালে তিরিশোর্ধ্ব ব্রিটিশ মেয়েরা ভোটাধিকার পেল। আর আমেরিকায় মেয়েরা পেল ১৯২০ সালে।
অথচ একদা সিন্ধু সভ্যতার উত্তরাধিকারী এই উপমহাদেশের নারীরাও সেই মহৎ ঐতিহ্যের সংগ্রামী ধারায় সিক্ত হয়েছে। সমাজ প্রগতির স্রোতে অবগাহন করেছে। অন্তঃপুরের অন্ধকার গৃহকোণ থেকে আলোচিত রাজপথ অবধি প্রসারিত ছিল বাংলার নারী সংগ্রামীদের পদচারণা।
সেই পদচারণার কিছু উদাহরণ তুলে ধরলাম।
১) আমাদের উপমহাদেশে প্রথম সমাজ ও রাজনৈতিক সচেতন নারীর পরিচয় পাওয়া যায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তার নাম হল লোপা। তিনি বিখ্যাত ব্রহ্মবাদিনী গার্গীর আপন পিসি।
২) ঋৃগ্বেদে অনেক নারী যোদ্ধার নাম রয়েছে। মুদুগলিনী, বিশপলা, বধ্রিমতী শশিয়সী উল্লেখযোগ্য।
৩) খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতকের দিকে পতঞ্জলি অস্ত্রধারিণী শক্তিকীর কথা বলা বাহুল্য।
৪) প্রাচীন নারী ঋষিদের মধ্যে রয়েছে গার্গী, গোধা,শাশ্বতী, ঘোরা, অপলা, বাচক্ররি, আত্রেয়ী ও মৈত্রয়ী প্রমুখ।
৫) দ্বিজ বংশীদাশের কন্যা চন্দ্রাবতী (১৫৭৫) রামায়ন অনুবাদ করেন।
৬) মোগল রাজবংশীয় নারীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল নুরজাহান, জাহানারা, জেবুন্নেসা ও যোদ্ধাবাঈ।
৭) ইংরেজদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী - ফকির বিদ্রোহের নেত্রী ছিলান দেবি চৌধুরানী।
৮) ২য় চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী কর্ণাগড়ের রাণী শিরোমনি।
৯)১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ। বেগম হযরত মহল বা কিট্টুর রানী চেন্নামার মত অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল মেয়েরা।
১০) নর্তকী আজীজানও "মস্তানি মন্ডলী" নামে একটি অশ্বারোহী নারী বাহিনী গঠন করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত।
১১) বাংলার প্রথম নারী সংগঠন হল "সখী সমিতি" যা ১৮৮৫ সালে স্বর্ণকুমারী প্রতিষ্ঠা করেন।
১২) ১৯১০ সালে সরলা দেবী চৌধুরাণী ভারত স্ত্রী মহামন্ডল নামে সর্ব ভারতীয় নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৩) ১৯১৯ সালে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য লেডী অবলা বসু প্রতিষ্ঠা করেন নারী শিক্ষা সমিতি।
১৪) ১৯২০ সালে জোতির্ময়ী গাঙ্গুলী কলকাতা কংগ্রেসে প্রথম নারী স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করেন।
১৫) ১৯২১ সালে কবি কামিনি রায় গড়ে তুলেন বঙ্গীয় নারী সমাজ।
১৬) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ভগ্নি উর্মিলা দেবী গড়ে তুলেন নারী কর্ম মন্দির।
১৭) মেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেম সঞ্চারের উদ্দেশ্যে আশালতা সেন ১৯২৩ সালে গড়ে তুলেন "গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি "।
১৮) বাসন্তী দেবী ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জাতীয় নেত্রী। ১৯২১ সনে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভা নেত্রি নির্বাচিত হয়।
১৯) কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন প্রথম বাঙালী মহিলা ডাক্তার। অনেক সংগ্রাম করে তিনি মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট হন।
২০) নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোসের চিন্তাধারা প্রচারের জন্য তার মা প্রভাবতী বসু তত্ত্বাবধানে ১৯২৭ সালে গঠিত হয় মহিলা রাষ্ট্র সংঘ।
২১) লতিকা ঘোষ ১৯২৮ সালে গড়ে তুলেন স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী।
২২) জ্ঞানদানন্দিনী দেবী - সে সময় ইংল্যান্ড গমন করেন। তিনি ছিলেন বাঙালী নারীর পোষাকের সংস্কারক।
২৩) ননী বালা দেবী বৃটিশ বিরোধী ধারার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৮ সালে তিনি ছিলেন প্রথম নারী রাজবন্দী।
২৪) দু'করিবালা দেবী বিপ্লবীদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্য আড়াই বছর কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।
২৫) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ নেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত।
২৬) মাতঙ্গিনী হাজরা, ৭২ বছর বয়স্ক কংগ্রেস নেত্রী স্বদেশী আন্দোলনে গুলিতে শহীদ হবার সময়ও স্বাধীনতার পতাকা ভুলুন্ঠিত হতে দেননি।
২৭) মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা মহিলা কবি রুপে প্রথম সনেট রচনা করেন।
২৮) ১৯৬৭ সালে সুমিতা দেবী প্রথম মহিলা হিসেবে চলচিত্র প্রযোজনা করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, " পুরুষরাই ইতিহাস সৃষ্টি করে"- অতীত পূজার এই প্রবল দাপটে ঢাকা পরে গেছে এসব নারীদের কথা।
আজকের লেখাটা আমার বোনটার জন্য।
অধিকার কেউ কাউকে দেয়না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়।
গনতন্ত্রের প্রাচীনতম উদাহরণ বলতে আমরা বুঝি গ্রীসের এসেম্বলি বা রোমের সিনেট বা ভারতের পঞ্চায়েত। অথচ এসবের মধ্যে ক্রীতদাসের মত নারীদেরও কোন ভোটাধিকার ছিলনা। সপ্তদশ হতে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ প্রবর্তিত এবং প্রতিষ্ঠিত আধুনিক গনতন্ত্রেও নারীর কোন রাজনৈতিক অধিকার ছিলনা। অবশেষে সভ্য ইউরোপে অনেক মেয়ের হাজতবাস, পুলিশের পিটুনি ও অনশন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ১৯১৮ সালে তিরিশোর্ধ্ব ব্রিটিশ মেয়েরা ভোটাধিকার পেল। আর আমেরিকায় মেয়েরা পেল ১৯২০ সালে।
অথচ একদা সিন্ধু সভ্যতার উত্তরাধিকারী এই উপমহাদেশের নারীরাও সেই মহৎ ঐতিহ্যের সংগ্রামী ধারায় সিক্ত হয়েছে। সমাজ প্রগতির স্রোতে অবগাহন করেছে। অন্তঃপুরের অন্ধকার গৃহকোণ থেকে আলোচিত রাজপথ অবধি প্রসারিত ছিল বাংলার নারী সংগ্রামীদের পদচারণা।
সেই পদচারণার কিছু উদাহরণ তুলে ধরলাম।
১) আমাদের উপমহাদেশে প্রথম সমাজ ও রাজনৈতিক সচেতন নারীর পরিচয় পাওয়া যায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তার নাম হল লোপা। তিনি বিখ্যাত ব্রহ্মবাদিনী গার্গীর আপন পিসি।
২) ঋৃগ্বেদে অনেক নারী যোদ্ধার নাম রয়েছে। মুদুগলিনী, বিশপলা, বধ্রিমতী শশিয়সী উল্লেখযোগ্য।
৩) খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতকের দিকে পতঞ্জলি অস্ত্রধারিণী শক্তিকীর কথা বলা বাহুল্য।
৪) প্রাচীন নারী ঋষিদের মধ্যে রয়েছে গার্গী, গোধা,শাশ্বতী, ঘোরা, অপলা, বাচক্ররি, আত্রেয়ী ও মৈত্রয়ী প্রমুখ।
৫) দ্বিজ বংশীদাশের কন্যা চন্দ্রাবতী (১৫৭৫) রামায়ন অনুবাদ করেন।
৬) মোগল রাজবংশীয় নারীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল নুরজাহান, জাহানারা, জেবুন্নেসা ও যোদ্ধাবাঈ।
৭) ইংরেজদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী - ফকির বিদ্রোহের নেত্রী ছিলান দেবি চৌধুরানী।
৮) ২য় চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী কর্ণাগড়ের রাণী শিরোমনি।
৯)১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ। বেগম হযরত মহল বা কিট্টুর রানী চেন্নামার মত অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল মেয়েরা।
১০) নর্তকী আজীজানও "মস্তানি মন্ডলী" নামে একটি অশ্বারোহী নারী বাহিনী গঠন করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত।
১১) বাংলার প্রথম নারী সংগঠন হল "সখী সমিতি" যা ১৮৮৫ সালে স্বর্ণকুমারী প্রতিষ্ঠা করেন।
১২) ১৯১০ সালে সরলা দেবী চৌধুরাণী ভারত স্ত্রী মহামন্ডল নামে সর্ব ভারতীয় নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৩) ১৯১৯ সালে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য লেডী অবলা বসু প্রতিষ্ঠা করেন নারী শিক্ষা সমিতি।
১৪) ১৯২০ সালে জোতির্ময়ী গাঙ্গুলী কলকাতা কংগ্রেসে প্রথম নারী স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করেন।
১৫) ১৯২১ সালে কবি কামিনি রায় গড়ে তুলেন বঙ্গীয় নারী সমাজ।
১৬) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ভগ্নি উর্মিলা দেবী গড়ে তুলেন নারী কর্ম মন্দির।
১৭) মেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেম সঞ্চারের উদ্দেশ্যে আশালতা সেন ১৯২৩ সালে গড়ে তুলেন "গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি "।
১৮) বাসন্তী দেবী ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জাতীয় নেত্রী। ১৯২১ সনে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভা নেত্রি নির্বাচিত হয়।
১৯) কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন প্রথম বাঙালী মহিলা ডাক্তার। অনেক সংগ্রাম করে তিনি মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট হন।
২০) নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোসের চিন্তাধারা প্রচারের জন্য তার মা প্রভাবতী বসু তত্ত্বাবধানে ১৯২৭ সালে গঠিত হয় মহিলা রাষ্ট্র সংঘ।
২১) লতিকা ঘোষ ১৯২৮ সালে গড়ে তুলেন স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী।
২২) জ্ঞানদানন্দিনী দেবী - সে সময় ইংল্যান্ড গমন করেন। তিনি ছিলেন বাঙালী নারীর পোষাকের সংস্কারক।
২৩) ননী বালা দেবী বৃটিশ বিরোধী ধারার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৮ সালে তিনি ছিলেন প্রথম নারী রাজবন্দী।
২৪) দু'করিবালা দেবী বিপ্লবীদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্য আড়াই বছর কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।
২৫) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ নেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত।
২৬) মাতঙ্গিনী হাজরা, ৭২ বছর বয়স্ক কংগ্রেস নেত্রী স্বদেশী আন্দোলনে গুলিতে শহীদ হবার সময়ও স্বাধীনতার পতাকা ভুলুন্ঠিত হতে দেননি।
২৭) মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা মহিলা কবি রুপে প্রথম সনেট রচনা করেন।
২৮) ১৯৬৭ সালে সুমিতা দেবী প্রথম মহিলা হিসেবে চলচিত্র প্রযোজনা করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, " পুরুষরাই ইতিহাস সৃষ্টি করে"- অতীত পূজার এই প্রবল দাপটে ঢাকা পরে গেছে এসব নারীদের কথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন