আনোয়ারা পশ্চিমাঞ্চলের সাগর ও কর্ণফুলীর মোহনার একটি গ্রাম হল বন্দর
গ্রাম। সাংগঠনিক কাজের খাতিরে আমার অনেকবার আসা যাওয়া হয়েছে এই গ্রামে।
ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারিনি এই গ্রামের ইতিহাস।
এইগ্রামের রয়েছে এক সুপ্রাচীন ইতিহাস। মগ ও পর্তুগীজরা এখানে পত্তন করেছিল
সেই প্রাচীন দেয়াং বন্দর। এই বন্দর শহরটি তখন পোর্টোগেন্ডো বা সিটি অব
বেঙ্গলা নামে সুপরিচিত ছিল। এই বন্দর শহরকে কেন্দ্র করে আরব্য বণিক থেকে
শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজপুত্ররা ছুটে আসত।
এই বন্দর শহরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক যুদ্ধ বিগ্রহ সংঘটিত হয়। ১৬৬৬ সালে
সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয় আরাকান বাহিনীর সাথে মোগল বাহিনীর। এইযুদ্ধে
আরাকান বাহিনীর পরাজয় ঘটলে পুরা দেয়াংরাজ্য মোগলদের দখলে চলে যাই। মোগলরা
কর্ণফুলীর অপর তীর সদরঘাটস্থ এলাকায় নতুন বন্দরের পত্তন করে। সেই থেকে
প্রাচীন এই বন্দর শহরের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাই। কিন্তু বন্দর শহরের নাম
অনুসারে "বন্দরগ্রাম" নামক এলাকাটি স্মৃতি হয়ে আছে। কর্ণফুলীর মোহনা থেকে
বৈরাগ ও চাতরী পযর্ন্ত দেয়াং পাহাড়ের মাঝপথে রয়েছে উত্তর বন্দর ও দক্ষিণ
বন্দর। উত্তর বন্দরে রয়েছে ঐতিহাসিক চাঁদ সওদাগরের দীঘি। আরো রয়েছে দেয়াং
দুর্গ, প্রাচীন বন্দরের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, মেরিন একাডেমী ইত্যাদি। তাছাড়া
মোগল আমলের প্রসিদ্ধ জমিদার ভগবান সিং এর জন্ম এইই গ্রামে। তাছাড়া রয়েছে
প্রসিদ্ধ কান্তির হাট। বৃটিশ আমলে বন্দর গ্রামে বাস করতেন প্রসিদ্ধ হিন্দু
জমিদার কান্তি দত্ত। তিনি এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য নিজের বাড়ীর নিকটে
১৮৮০ সালে নিজ নামে বাজার প্রতিষ্ঠিত করেন। তার পুত্র ডা: রজনী কুমার দত্ত
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। তিনি বৈরাগ ইউনিয়ন বোর্ডের প্রথম প্রেসিডেন্ট
ছিলেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তাদের কোন বংশধর আজ আর বন্দর গ্রামে নেয়। তাদের বাড়ীটির অধিকাংশ অন্যের দখলে চলে গেছে। শুধু স্মৃতি হিসেবে আছে গ্রামের নামটি ও তাদের শ্মশানের স্মৃতি মন্দিরটি।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তাদের কোন বংশধর আজ আর বন্দর গ্রামে নেয়। তাদের বাড়ীটির অধিকাংশ অন্যের দখলে চলে গেছে। শুধু স্মৃতি হিসেবে আছে গ্রামের নামটি ও তাদের শ্মশানের স্মৃতি মন্দিরটি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন