সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮

নাকি সংগ্রাম ও সুধাংশু হয়ে গেল: (সাত সকালের কষ্ট)

সকাল থেকে শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। বিছানায় শুয়ে আছি।
হঠাৎ অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল আসল।

শুরুতেই বলল, কেমন আছেন?
-ভাল!
-আপনি কেমন আছেন?
-ভাল আছি।
- আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা।পরিচয়টা দিলে ভাল হয়।
- আমার নাম সংগ্রাম। ভোলা থেকে বলছি।
- আসলে আপনাকে চিনতে পারছিনা।
-আপনি রতন ভাই না।
- না, আমি রতন না। আমাকে সবাই রিপন নামে ডাকে।
-ওকে! সরি সরি।
ফোনটা কেটে দিল।

সে ফোনটা রেখে দেওয়ার পর থেকে মনটা চঞ্চল হয়ে গেল। হঠাৎ করে জয়ন্তীর কথা মনে পরে গেল।
ভাবছেন জয়ন্তীটা কে!
তাহলে শুনুন:
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধজয়ের পর, সদ্য স্বাধীন দেশে জন্ম নেওয়া ছেলে- মেয়ের নাম রেখেছিল দুর্জয়, স্বাধীন, সংগ্রাম, মুক্তি ইত্যাদি। তাদের জন্মের সাথে জড়িয়ে আছে গা শিউরে উঠা কাহিনী।
ঠিক সে রকম এক কাহিনীর নায়ক হল ভোলার সংগ্রাম।
২০০১ সালের নির্বাচনের পরদিন ২রা অক্টোবর অষ্টাদশী গ্রাম্য গৃহবধু জয়ন্তী যখন তার প্রথম সন্তানের জন্মমুহূর্তে প্রসব বেদনায় অস্থির, ঠিক সেই সময় দিনে দুপুরেই বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে বিএনপি ও জামাতের একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায় তাদের ঘরে। ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার সাত নম্বর পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামে সেদিন অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী দা, ছুরি, লাঠি ও বল্লম সহ হামলা চালায় সংখ্যালঘু সম্রদায়ের বাড়িগুলোতে।
সেদিন জয়ন্তীর শাশুড়ি মুক্তিরাণী ও একজন ধাত্রী জয়ন্তীর বাচ্চা প্রসব করাচ্ছিলেন। এসময় সন্ত্রাসীরা তার ঘরের বেড়ায় দা ও ছুরি দিয়ে কোপ মারে। সন্ত্রাসীদের তান্ডবে পালিয়ে যায় ধাত্রী। ঘরে শুধু আছে অসহায় জয়ন্তী ও তার শাশুড়ি। সন্ত্রাসীরা তখনো নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ঘরে ঢুকার। ঠিক সেই সময় জয়ন্তী জন্ম দেয় এক পুত্র সন্তানের।
হতবুদ্ধি মুক্তিরাণী তখন কোন উপায় না দেখে জয়ন্তীকে ভালভাবে জরিয়ে ধরে নবজাতকে তার পরনের শাড়ীতে পেঁচিয়ে নিয়ে ঘরের অপর কোনার বেড়া ভেঙে জয়ন্তীকে টেনে হিচড়ে বের করে আনেন। এর পর ওই অবস্থায় দোঁড়ে পালান নিকটস্থ ধান ক্ষেতের দিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলের আশায়। সদ্য প্রসূতি মা জয়ন্তীর তখন দৌঁড়ে পালানোর মত অবস্থা ছিল। কিন্তু মৃত্যূভয়ে ভীত মুক্তিরাণী তাকে জোর করে টেনে নিয়ে যায়। তখন পর্যন্ত সদ্যজাত শিশুকে মায়ের নাড়ী থাকে বিচ্ছিন্ন করার সময় পাননি। সেদিন একটি ধানক্ষেতে তার রাত ৯টা পর্যন্ত সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে নিয়ে অপেক্ষা করেছিল। সেই সন্তানের নাম রাখা হয় সংগ্রাম।

#জানিনা আজ কেমন আছে সেই সংগ্রাম?
#আজো কি সে আছে এ দেশে?
#নাকি সংগ্রাম ও সুধাংশু হয়ে গেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন