মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮

রাখিবন্ধন উৎসব ও রবীন্দ্রনাথ

 রবীন্দ্রনাথের প্রথম পরিচিতি হল তিনি একজন কবি। একজন কবি হিসাবে তিনি রাজনীতির উর্দ্ধে তাঁর মনকে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। রাজনীতির ক্ষতিকারণ দিকটি সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। তাই প্রথম দিকে রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না। তিনি মনে করতেন যে, রাজনীতি সকল দেশেই নৈতিকতার অবনমন ঘটিয়েছে এবং রাজনীতির ফলেই মিথ্যা, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা ও কপটতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি-ভাবনা পরবর্তীকালে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে উঠেছিল। কেননা, একজন কবি হিসাবে তিনি রাজনীতি সম্পর্কে অনাগ্রহী হলেও তিনি যেমন ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেছেন তেমনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সমর্থনেও এগিয়ে এসেছেন। ১৯০৫ সালে কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই ভারতের রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আসে। তবে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভের পর রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি সমগ্র বিশ্ববাসীর নজর আকৃষ্ট হয়। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ-এ সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। এই রাজনৈতিক সক্রিয়তার দ্বারা ইউরোপের সর্বাধিক নজর আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়। তাছাড়া ইতিমধ্যে তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে রচিত ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হলে রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ইউরোপের মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বঙ্গভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া স্বদেশি আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের অংশগ্রহণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
সাংস্কৃতিক উৎসবের ধর্মীয় রঙ হয় কিন্তু কোন কোন সময়ে তা ধর্মীয় রঙ ছাড়িয়ে রাজনৈতিক রুপও ধারন করে। তেমনি একটি উদাহরন হল রাখীবন্ধন উৎসব, যা সমগ্র উপমহাদেশে এখনো প্রাসঙ্গিক।
১৭ সেপ্টেম্বর কোলকাতার সাবিত্রী লাইব্রেরী স্বধর্ম সমিতির বিশেষ অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ সভাপতির ভাষণে প্রস্তাব রাখেন –১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখ থেকে ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ওই আইন কার্যকর হলে সেদিন কোন বাড়িতে রান্নাবান্না হবে না। বাঙালি জনসাধারণ অরন্ধন পালন করে উপোষ থাকবে। বাঙালির ঐক্য বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে হবে রাখিবন্ধন উৎসব। দিনটিকে মিলন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাজনীতিকরা ওই তারিখে রাজধানী কলকাতায় হরতাল আহ্বান করে।
রাখিবন্ধন উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ রাখি-সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ূ, বাংলার ফল—পূণ্য হউক, পূণ্য হউক’ রচনা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন