সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০২০

ভালো থাকবেন হে বীর ! হে দেশপ্রেমিক ! বীরোত্তম চিত্ত রঞ্জন দত্ত

বীরোত্তম চিত্ত রঞ্জন দত্ত

.............খাওয়া-দাওয়া করে গ্রাম থেকে দুজন গাইড নিয়ে চললাম হিমুর উদ্দেশে। সারা রাত নদী-খাল-বিল পার হয়ে পৌঁছলাম আটগ্রাম বলে একটি গ্রামে। সেখান থেকে হিমুর দূরত্ব দুই মাইল। আটগ্রামে পৌঁছলাম ভোর চারটায়। গ্রামের পাশে নদী পার হতে হবে। ওপারে সবাই পৌঁছলাম। সকাল হতে চলেছে। দেখলাম হিমু পর্যন্ত পুরো মাঠ খোলা। চিন্তা করলাম দিনের বেলা এই খোলা মাঠের ভেতর দিয়ে যাওয়া সমীচীন হবে না।

যা-ই হোক আমরা সবাই আবার নদী পার হয়ে আটগ্রামে ফিরে এলাম। বেলা সাড়ে আটটা হবে। পাকিস্তানিদের দিক থেকে শুরু হলো গোলাবর্ষণ। একই সঙ্গে মেশিনগান ও এসএমজির গুলিবর্ষণ। কিছু করার নেই, একেবারে শত্রুর মুখে পড়ে গেছি। আটগ্রাম ছোট গ্রাম। বৃষ্টির মতো গোলাগুলি হচ্ছিল। চিন্তা করলাম যদি আটগ্রামে থাকি সবাই মারা যাব। তাই সবাইকে বললাম, যে যেভাবে পারে পেছনে যেতে। ......

পরে সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। তিনি অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেন। তাঁর প্রেরণায় মুক্তিযোদ্ধারা যথেষ্ট সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন।

যেই বীর সন্তানের কথা বললাম তিনি হলেন বীরোত্তম চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। তিনি ৪নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।

চিত্ত রঞ্জন দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে। তার পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তার বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত। শিলং-এর 'লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুল' -এ দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন৷ হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন তিনি৷ পরবর্তীতে খুলনার দৌলতপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন৷ পরে এই কলেজ থেকেই বি.এস.সি পাশ করেন৷

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার৷ এই বিষয়ে চিত্ত রঞ্জন দত্তকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার৷ পরবর্তীকালে তিনি সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠন করেন এবং নাম দেন বাংলাদেশ রাইফেলস। বর্তমানে এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। চিত্ত রঞ্জন দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ডাইরেক্টর জেনারেল। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন৷ ১৯৭৯ সালে বি আর টি সি এর চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন৷

“আমার সরকার, আমার জনগণ যেন এক থাকেন” এই কথা বলার মত বীর সেনা আজ পাড়ি দিয়েছেন দূর অজানায় না ফেরার দেশে।

বীরোত্তম চিত্ত রঞ্জন দত্ত, সি আর দত্ত আপনাকে স্যালুট। ভালো থাকবেন হে বীর ! হে দেশপ্রেমিক !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন