রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

মন্দির ও ঈশ্বরের সান্নিধ্য

মন্দির হল দেব-উপাসনার স্থান। ‘মন্দির’ বলতে বোঝায় ‘দেবতার গৃহ’। হিন্দু মন্দির এমন একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র যেখানে মায়ার জগৎ থেকে মানুষ তীর্থযাত্রী বা পূণ্যার্থীর বেশে জ্ঞান ও সত্যের জগতের সন্ধানে আসেন। হিন্দু মন্দিরের প্রতীকতত্ত্ব ও গঠনভঙ্গিমা বৈদিক ঐতিহ্যের মধ্যেই নিহিত আছে। একটি মন্দিরের মধ্যে হিন্দু বিশ্বতত্ত্বের সকল ধারণার সন্ধান পাওয়া যায়। এরমধ্যে ভাল, মন্দ ও মানবিক দিকগুলির সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুর কালচক্র ধারণা এবং পুরুষার্থ ধারণার সব কিছুই প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ধর্ম, কাম, অর্থ, মোক্ষ, কর্ম ও ভক্তির দার্শনিক ধারণাগুলিও প্রতীকের মাধ্যমে মন্দিরে উপস্থিত থাকেহিন্দুধর্মের ভক্তিবাদী শাখায় মন্দির হল পূজার স্থান। পূজার মাধ্যমে ভক্তরা দেবতাকে শ্রদ্ধা জানান, ঈশ্বরকে ডাকেন এবং অধ্যাত্মচিন্তার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। হিন্দুধর্মের অন্যান্য শাখায় মন্দিরে ভক্তেরা জপ, ধ্যান, যোগ বা শাস্ত্রপাঠের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উপাস্যের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন।

আমাদের মন্দিরে প্রবেশ করার আগে,আমাদের মন স্থির করতে হয়। আর আমরা যখন মন্দিরে প্রবেশ করি আমাদের মন শান্ত ও পবিত্র হয়ে যায়।

মন্দিরে প্রবেশের আগে আমাদের অবশ্যই স্নান করে পরিস্কার কাপড় পরিধান করতে হয়। মন্দিরে সব সময় ট্র্যাডিশনাল পোষাক পরিধান করে যাওয়া উচিত। যেমন- শাড়ি, পাঞ্জাবী, ধুতি ইত্যাদি যা আপনাকে মন্দিরের মেঝেতে বসে আরাধনা করতে সহায়তা করবে।

আমারা যখন মন্দিরে প্রবেশ করি আমাদের মনকে স্থির ও শান্ত করতে হয় এবং এই বিশ্বাস রাখতে যে, ঈশ্বর আমার আরাধনা গ্রহণ করবেন। বাহ্যিক চিন্তা সব মন থেকে ফেলে দিতে হয়।  মন্দিরে যাওয়ার সময় অবশ্যই আমাদের ঈশ্বরকে নিবেদনের জন্য ফল-মূল, ফুল, মোমবাতি , ধুপকাঠি নিয়ে যাওয়া উচিত। মন্দিরে প্রবেশ করে আমরা অনেকে হাত জোড় করে, মন্দির প্রদক্ষিণ করে ভগবানকে স্মরণ করেন।

তবে মন্দির দর্শনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রণাম। পুরুষ ও নারীর প্রণামের পদ্ধতির মধ্যে কিছুটা আলাদা আছে। পুরুষেরা সাধারনত যেভাবে প্রাণাম করে তাকে বলা হয় অষ্টাঙ্গ প্রনাম। এতে তার দুই পা, বুক, কপাল, দুই হাটু ও দুই পা মোট আটটি অঙ্গ ভূমি স্পর্শ করবে। মহিলারা সাধারনত যেভাবে প্রাণাম করে তাকে বলা হয় পঞ্চাঙ্গ প্রনাম। এতে তার দুই পা, কপাল, দুই হাটু ও দুই পা মোট পাঁচটি অঙ্গ ভূমি স্পর্শ করবে। এই প্রণামের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করা হয়।

মন্দিরে কেউ কেউ ভজন বা ভক্তিগীতি গানের মাধ্যমে, মন্ত্রের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করে থাকেন। অনেকে ধ্যানের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করেন।

হিন্দু মন্দিরের উদ্দেশ্য ব্যক্তির মনকে পবিত্র করা ও ভক্তের আত্মজ্ঞান জাগরিত বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরের প্রধান দেবতা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের বৈচিত্র্যের পরিচায়ক।

হিন্দুধর্মে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় চেতনার মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। তাই হিন্দু মন্দিরগুলি শুধুই যে  পবিত্র স্থান তাই নয়, ধর্মনিরপেক্ষ স্থানও বটে। যার কারনে অনেক মন্দির আধ্যাত্মিক জীবনের বাইরে সামাজিক রীতিনীতি ও দৈনিক জীবনের ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়ে এগুলিকে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুপ নিয়েছে । কোনো কোনো মন্দির বিশেষ বিশেষ উৎসবের জন্য বিখ্যাত। সেখানে নৃত্য ও গীতের মাধ্যমে শিল্পের চর্চা করা হয়। তাছাড়া  বিবাহ,  অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ ইত্যাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠানও পালিত হয় অনেক মন্দিরে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের ক্ষেত্রেও হিন্দু মন্দির গুরুত্বপূর্ণ। অনেক হিন্দু রাজবংশের বংশপরম্পরার সঙ্গে হিন্দু মন্দিরের যোগাযোগ আছে। আবার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গেও অনেক হিন্দু মন্দির অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন