সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১১

আর. কে. নারায়ণ-এর গল্প ...... মাসে পঁয়তাল্লিশ টাকা

অনুবাদ: আনিকা শাহ

শান্তা আর ক্লাসে থাকতে পারছিল না। কাদার ছাঁচ বানানো, গান, ড্রিল, অক্ষর আর সংখ্যা পরিচয় সব ক্লাস শেষ করে ও রঙ্গিন কাগজ কাটছিল। ঘন্টা বাজার পর যতক্ষণ না টিচার বলেন, “এখন তোমরা বাড়ি যেতে পার” অথবা, “কাঁচি সরিয়ে রেখে অক্ষরগুলো তুলে নাও” ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে কাগজ কাটতে হবে। শান্তা সময় জানার জন্য অস্থির হয়ে উঠছিল। ও ওর পাশে বসা বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল, “এখন কি পাঁচটা বাজে?”
“হয়তো”, সে উত্তর দিল।
“নাকি এখন ছয়টা বাজে?”
“মনে হয়না” ওর বন্ধু উত্তর দিল, “কারণ ছয়টার সময়ে রাত হয়ে যায়।”
“তোর কি মনে হয় এখন পাঁচটা বাজে?”
“হ্যা।”
“ওহ, আমাকে যেতে হবে। বাবা এতক্ষণে বাসায় এসে যাবে। বাবা বলেছিল আমাকে পাঁচটার মধ্যে তৈরি হয়ে থাকতে। বাবা আজকে সন্ধ্যায় আমাকে সিনেমায় নিয়ে যাবে। আমাকে বাসায় যেতেই হবে।”
কাঁচিটা ফেলে রেখে ও টিচারের কাছে দৌঁড় দিলো। “ম্যাডাম, আমাকে বাসায় যেতে হবে।”
“কেন, শান্তা বাঈ?”
“কারণ এখন পাঁচটা বাজে।”
“তোমাকে কে বলল যে এখন পাঁচটা বাজে?”
“কমলা।”
“এখন পাঁচটা বাজেনা। এখন- তুমি ঐখানের ঘড়িটা দেখতে পাচ্ছ? আমাকে বল তো এখন সময় কত? আমি সেদিন তোমাকে ঘড়ি দেখতে শিখিয়েছিলাম।”
শান্তা একেদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে সংখ্যাগুলো সতর্কভাবে গুনে ঘোষণা করল,“এখন নয়টা বাজে।”
টিচার অন্যান্য মেয়েদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,কে আমাকে ঘড়ির সময়টা বলবে?” ওদের অনেকেই শান্তার সাথে একমত হয়ে বলল যে আসলেই নয়টা বাজে যতক্ষণ না টিচার বললেন,তোমরা শুধু বড় কাটাটা দেখছ। ছোট কাটাটা দেখো, কোথায় ওটা?”
“দুই আর অর্ধেকে।”
“তাহলে কয়টা বাজে?”
“দুইটা আর আরও অর্ধেকটা বাজে।”
“এখন দুইটা পঁয়তাল্লিশ বাজে, বুঝলে? এখন তোমরা সবাই সিটে যাও।” দশ মিনিটের মাথায় শান্তা আবার টিচারের কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করল,“এখন কি পাঁচটা বাজে, ম্যাডাম, কারণ পাঁচটার মধ্যে আমাকে তৈরি হয়ে থাকতে হবে। নাহলে বাবা আমার ওপর রাগ করবে। বাবা আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছে।”
“কখন?”
“এখন।”
টিচার শান্তাকে যাবার অনুমতি দিলে ও বইখাতা নিয়ে আনন্দে চিৎকার করে ঝড়ের বেগে ক্লাস থেকে বের হয়ে এলো।ও ছুটে বাসায় এসে বইগুলো মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে ডাকল, “মা, মা।”
মা পাশের বাসায় তার বান্ধবীর সাথে গল্প করতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে আসলেন।“তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরলে কেন?” মা জানতে চাইলেন।
“বাবা কি বাসায় এসে গিয়েছে?” শান্তা জিজ্ঞেস করল। কফি কিংবা টিফিন না খেয়ে আগে সে তেরি হতে বসল। ট্রাঙ্ক খুলে ও ওর সবচেয়ে পাতলা ফ্রক আর নিকারটা পড়তে চাইল কিন্তু মা চাইলেন সন্ধ্যার জন্য ওকে লম্বা স্কার্ট আর মোটা কোটটা পরাতে। শান্তা যে কার্ডবোর্ডের সাবানের বাক্সটায় পেন্সিল, ফিতা আর চকের টুকরা রাখে, সেখান থেকে চমৎকার একটা ফিতা বেছে নিলো। জামা নিয়ে মা আর মেয়ের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত বাক্-বিতন্ডা হল এবং শেষ পর্যন্ত মাকে হাল ছাড়তেই হল। শান্তা ওর প্রিয় গোলাপি জামাটা পড়ল আর চুলে বেনী করে তাতে একটা ফিতা বাঁধল। তারপর মুখে পাউডার দিয়ে আর কপালে সিঁদুরের টিপ দিয়ে ও বলল, “এখন বাবা বলবে আমি খুব ভাল মেয়ে কারণ আমি তৈরি হয়ে গিয়েছি। তুমি যাচ্ছ না, মা?”
আজকে নয়।”
***
শান্তা ছোট্ট গেটটাতে দঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকাল।
মা বললেন, “বাবা তো পাঁচটার পরে আসবে। রোদে দাঁড়িয়ে থেকো না। এখন কেবল চারটা বাজে।”
উল্টো দিকের বাড়িগুলোর পেছনে সূর্য যখন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল তখন শান্তা বুঝতে পারল অন্ধকার হয়ে যাবে। ও দৌঁড়ে মার কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করল, মা, বাবা কেন এখনও আসছে না?”
আমি কি করে জানব? মনে হয় অফিসের কাজে আটকে গেছে।”
শান্তা মুখ বাঁকালো, “অফিসের লোকগুলোকে আমার ভাল লাগেনা। ওরা খারাপ লোক…।”
ও আবার গেটের কাছে গিয়ে বাইরে তাকাল। মা ভেতর থেকে ডাকলেন, ভেতরে আস শান্তা, অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। ওখানে দাঁড়িয়ে থেকো না।” কিন্তু শান্তা ভেতরে গেলো না। ও গেটে দাঁড়িয়ে থাকল আর তখনই ওর মাথায় অদ্ভুত একটা বুদ্ধি আসল। ও কেন অফিসে যেয়ে বাবাকে নিয়ে তারপর সিনেমায় যায় না? ও চিন্তা করল বাবার অফিস কোথায় হতে পারে। ওর এ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না।ও প্রতিদিন দেখে বাবা রাস্তার শেষ মাথায় যেয়ে বাঁক ঘোরে। কেউ যদি ওখানে যায়, সে মনে হয় আপনা আপনি বাবার অফিসে পৌঁছে যাবে।ও একবার তাকিয়ে দেখল মা আশেপাশে আছে কিনা, তারপর রাস্তায় নেমে গেল।
***
তখন ছিল গোধূলি। যারা রাস্তায় যাচ্ছিল তাদের সবাইকে বিশাল দেখাচ্ছিল, ঘরের দেয়ালগুলোকে মনে হচ্ছিল অনেক উঁচু আর সাইকেল আর গাড়িগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সব ওর ওপর এসে পড়বে।
ও রাস্তার প্রায় শেষ মাথায় এসে পড়ল। কিছুক্ষণ পরই রাস্তার বাতিগুলো জ্বলে উঠলো আর পথিকদের ছায়ার মত দেখাতে লাগল। দুবার বাঁক ঘোরার পর শান্তা আর বুঝতে পারলছিল না ও কোথায় ছিল।ও নখ কাঁমড়াতে কাঁমড়াতে রাস্তার শেষ মাথায় এসে বসে পড়ল। ও তখন ভাবছিল কি করে ঘরে ফেরা যায়। ওদের পাশের বাড়ির ভৃত্যটি তখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে দেখে শান্তা উঠে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
ওহ, তুমি একা একা এখানে কি করছ?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
শান্তা জবাব দিল, আমি জানি না। আমি এখানে চলে এসেছি। তুমি কি আমাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে?” এরপর তার পেছন পেছন শান্তা জলদিই বাড়ি পৌঁছে গেল।
***
শান্তার বাবা ভেঙ্কাত রাও সেদিন সকালে অফিসের জন্য রওনা দিতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় একটা জাটকা সিনেমার বিজ্ঞাপন ছড়াতে ছড়াতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। শান্তা দৌঁড়ে রাস্তায় এসে একটা বিজ্ঞাপন উঠিয়ে নিয়ে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করেছিল,বাবা, তুমি আজকে আমাকে সিনেমায় নিয়ে যাবে?”প্রশ্নটা শুনে ভেঙ্কাত রাওয়ের মনটা খুব খারাপ হয়েছিল। বাচ্চাটা কোন ধরনের আমোদ-প্রমোদ আর জীবনের সাধারণ আনন্দগুলো ছাড়াই বেড়ে উঠছে। তিনি ওকে দুবারও সিনেমায় নিয়ে গিয়েছেন কিনা সন্দেহ । বাচ্চাটাকে তিনি একদম সময় দিতে পারেন না। যেখানে ওর বয়সী অন্যান্য বাচ্চারা পুতুল, জামাকাপড় কিংবা বেড়াতে যাবার সুযোগ সবই পেয়ে যায়, সেখানে শান্তা যেন একদম একা একা, রূঢ়ভাবে বেড়ে উঠছিল।
তিনি তখন তার অফিসের ওপর প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলেন। মাসে চল্লিশটা টাকা দিয়ে মনে হয় যেন ওরা তাকে পুরোদস্তুর কিনে ফেলেছে।
***
স্ত্রী-কন্যাকে অবহেলা করার জন্য তিনি নিজেকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। এমনকি তার স্ত্রীরও নিজের বন্ধু-বান্ধবের দল থাকতে পারত, আরও অনেক কিছুই থাকতে পারত। সে তো তাও বয়স্ক, কিন্তু শান্তা? কি নীরস, একঘেয়ে ওর জীবনটা! প্রতিটা দিন ওরা তাকে সন্ধ্যা সাতটা-আটটা পর্যন্ত অফিসে আটকে রাখে আর বাসায় ফিরে দেখা যায় শান্তা ঘুমিয়ে পড়েছে। এমনকি রোববারেও ওরা চায় যে সে অফিসে থাকুক। কেন ওরা ভাবে তার কোন ব্যক্তিগত জীবন নেই, নিজের কোন জীবন নেই? বাচ্চাটাকে পার্কে কি সিনেমায় নিয়ে যাবেন, সে সময়টা পর্যন্ত ওরা তাকে দেয়না।তিনি তখন ওদের দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যে তিনি তাদের খেলার বস্তু না। হ্যা, প্রয়োজনে তিনি তার ম্যানেজারের সাথে ঝগড়া করার জন্যও প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বললেন, “আজ বিকেলে আমি তোমাকে সিনেমায় নিয়ে যাব। পাঁচটায় তৈরি হয়ে থেকো।”
“সত্যি! মা!”, শান্তা চিৎকার করে উঠলো। মা রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে আসলেন।
“বাবা আজ বিকেলে আমাকে সিনেমায় নিয়ে যাচ্ছে।”
শান্তার মা একথা শুনে ব্যঙ্গের হাসি হাসলেন। বাচ্চার কাছে মিথ্যে প্রতিজ্ঞা করোনা…।” ভেঙ্কাত রাও তার দিকে তাকালেন, “বাজে কথা বলোনা। তুমি তো ভাবো একমাত্র তুমিই কথা দিয়ে কথা রাখতে জানো।
তিনি শান্তাকে বললেন, “পাঁচটায় তৈরি থেকো আর আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। যদি তুমি তৈরি হয়ে না থাক তাহলে কিন্তু আমি খুব রাগ করব।”
***
তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে অফিসে গেলেন। তিনি তার নিয়মিত কাজগুলো করে পাঁচটায় বের হয়ে যাবেন। আর যদি ওরা ওদের পুরানো কৌশলগুলো খাটানোর চেষ্টা করে, তাহলে তিনি বসকে বলবেন, “এই আমার পদত্যাগপত্র। আমার কাছে আমার বাচ্চার আনন্দ আপনার ঐ বাজে কাগজগুলোর চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
সারাদিনই কাগজপত্রগুলো স্রোতের মত তার টেবিলে আসতে থাকল, যেতে থাকল। তিনি সেগুলো পরীক্ষা করলেন, বাছাই করলেন, সাক্ষর করলেন। তাকে বারবার নিজেকে সংশোধন করতে বলা হল, সতর্ক ও অপমান করা হল। তিনি দুপুরে কফির জন্য মাত্র পাঁচ মিনিটের বিরতি পেলেন।
অফিসের ঘড়িতে যখন পাঁচটা বাজল আর অন্যান্য ক্লার্করা চলে যাচ্ছিলেন, তখন ভেঙ্কাত রাও ম্যানেজারের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি কি যেতে পারি, স্যার?”
ম্যানেজার তার সামনের কাগজ থেকে মুখ তুলে অবাক হয়ে বললেন, “তুমি!” এটা তো চিন্তাও করা যায় না যে ক্যাশ আর অ্যাকাউন্ট সেকশন পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যাবে। তুমি কিভাবে যেতে পারো?”
“আমার কিছু জরুরি ব্যক্তিগত কাজ আছে, স্যার।” ভেঙ্কাত রাও বললেন আর সকাল থেকে আওড়াতে থাকা কথাগুলো ভাবতে থাকলেন: এই যে আমার পদত্যাগপত্র…।” তিনি যেন দেখতে পেলেন শান্তা তৈরি হয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, ব্যাগ্রভাবে অপেক্ষা করছে।
অফিসের কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু থাকতে পারেনা। তুমি তোমার জায়গায় যাও। তুমি জানো আমি কতক্ষণ কাজ করি?” ম্যানেজার জানতে চাইলেন। ম্যানেজার অফিস শুরু হবার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে আসতেন আর অফিস শেষ হবার প্রায় তিন ঘণ্টা পর পর্যন্ত থাকতেন, এমনকি রোববারেও। অফিসের ক্লার্করা বলাবলি করত, ওর বউ মনে হয় বাসায় ওকে দেখলেই চাবকাতে থাকে; তাই বুড়ো প্যাঁচাটা অফিসে থাকতে এত ভালবাসে।”
“তুমি কি সেই গরমিলের কারণটা খুঁজে বের করেছো?” ম্যানেজারের প্রশ্ন।
এজন্য আমাকে ২০০টা ভাউচার পরীক্ষা করতে হবে। আমি ভাবছিলাম সেটা কালকে করব।”
“না, না, তা চলবে না। তোমাকে এখনই ভুলটা সংশোধন করতে হবে।”
ভেঙ্কাত রাও মিনমিন করে বললেন, “জ্বি, স্যার” এবং চোরের মত নিজের সিটে যেয়ে বসে পড়লেন।
***
ঘড়িতে ৫:৩০ বাজল। মানে আরও দু’ ঘণ্টা ধরে ভাউচার পরীক্ষা করার মত কষ্টকর কাজটা করতে হবে।অফিসের বাকি সবাই চলে গিয়েছে। শুধু তিনি আর তার সেকশনের আরেকজন ক্লার্ক তখনও কাজ করছিলেন, এবং অবশ্যই ম্যানেজার তো ছিলেনই। ভেঙ্কাত রাও খুব রেগে গেলেন। তিনি মনস্থির করে ফেললেন। তিনি এমন কোন দাস নন যে কিনা নিজেকে মাত্র ৪০ টাকায় বিকিয়ে দিয়েছে। তিনি সহজেই ঔ পরিমাণ টাকা আয় করতে পারেন। আর যদি নাও পারেন, তবুও ক্ষুধার তাড়নে মারা যাওয়াটা বোধহয় বেশি সম্মানজনক।
তিনি একটা কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলেন: এই আমার পদত্যাগপত্র। আপনারা যদি ভেবে থাকেন যে শুধুমাত্র ৪০ টাকা দিয়ে আপনারা আমার দেহ ও আত্মা কিনে নিয়েছেন তবে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমার মনে হয় না খেয়ে মারা যাওয়া আমার ও আমার পরিবারের জন্য সেই তুচ্ছ ৪০ টাকার দাসত্ব করার চেয়ে বেশি ভাল হবে, যে টাকার জোরে আপনি বছরের পর বছর আমাকে বেঁধে রেখেছেন। আমার ধারণা আমার বেতন বাড়িয়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহও আপনাদের নেই। আপনারা নিজেদের জন্য প্রায়ই অনেক কিছু করেন, কিন্তু আমি বুঝিনা কেন আপনারা কালেভদ্রেও আমাদের কথা চিন্তা করেন না। তবে এখন আমার জানার কোনো ইচ্ছাও নেই, যেহেতু আমি পদত্যাগ করছি। আমি যদি সপরিবারে ক্ষুধার জ্বালায় নিঃশেষ হয়ে যাই, তবে প্রার্থনা করি যেন আমাদের অতৃপ্ত আত্মা আপনাদের আজীবন তাড়া করে…।” তিনি চিঠিটা ভাঁজ করে খামে পুরলেন, খামের মুখ আঁঠা দিয়ে আটকালেন, তারপর খামের ওপর ম্যানেজারের নাম লিখে দিলেন। তিনি সিট থেকে উঠে ম্যানেজারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ম্যানেজার হাতে হাতে চিঠিটা পেয়ে গেলেন এবং তার লেখার প্যাডের ওপর রাখলেন।
“ভেঙ্কাত রাও”, ম্যানেজার বললেন, “আমার মনে হয় তুমি এই খবরটা শুনে খুশি হবে। আমাদের অফিসাররা আজ বেতন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আমি তোমার নাম সুপারিশ করেছি এবং তোমার বেতন পাঁচ টাকা বাড়ানোর কথা বলেছি। অর্ডার এখনও পাস হয়নি তাই, আমার মনে হয়, খবরটা আপাতত তোমার নিজের কাছে রাখাটাই ভাল হবে।” ভেঙ্কাত রাও লেখার প্যাডের মাঝে রাখা চিঠিটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন।
“ওটা কিসের চিঠি ছিল?”
“আমি আসলে একটা সাময়িক ছুঠির জন্য আবেদন করেছিলাম, স্যার, কিন্তু আমার মনে হয়…।”
“তুমি তো আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কোনো ছুটি নিতে পারবে না।”
“জ্বি, স্যার, আমি বুঝতে পেরেছি। এজন্যই আমি আমার দরখাস্ত ফেরত নিচ্ছি।”
“খুব ভালো। তা, তুমি ভুলটা খুঁজে বের করেছো?”
“আমি এখনও খুঁজছি, স্যার। এক ঘণ্টার মধ্যে বোধহয় সেটা বের হয়ে যাবে…।”
***
ভেঙ্কাত রাও বাসায় ফিরতে ফিরতে নয়টা বেজে গেল। শান্তা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওর মা বললেন, “ও জামাটা পর্যন্ত বদলাতে চায়নি, এই ভেবে যে যেকোনো সময় তুমি আসবে আর ওকে বাইরে নিয়ে যাবে। ও কিছুই খায়নি। জামা কুঁচকে যাবে সেই ভয়ে শুতেও চায়নি…।”
***
ভেঙ্কাত রাওয়ের মনটা খুব খারাপ হল যখন তিনি দেখলেন শান্তা ঘুমাচ্ছে, তার গোলাপী জামা পরে, চুল বেঁধে, পাউডার দিয়ে… একদম বাইরে যাবার জন্য তৈরি হয়ে।
“ওকে আমি নাইট শো তে নিয়ে যাই না কেন?”
তিনি শান্তাকে আলতো করে ঝাঁকি দিয়ে ডাকলেন, “শান্তা, শান্তা”, শান্তা ঘুমের ঘোরে বিরক্ত হয়ে পা ছুঁড়ে কেঁদে উঠলো। মা “ওকে আর জাগিও না” বলে শান্তাকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। ভেঙ্কাত রাও কিছুক্ষণ শান্তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর দুঃখিত গলায় বললেন, আমার পক্ষে ওকে আর বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। আসলে, ওরা আমার বেতনটা বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা।”



সূত্র:- arts.bdnews24.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন