বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৮

হাজারিখিল অভয়ারণ্যে আমাদের রোমাঞ্চকর অভিযান


বনে ক্যাম্প করে তাঁবুর মধ্যে থাকা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। সাধারণত জাতীয় উদ্যানগুলোতেই ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই জাতীয় উদ্যানের মূল আয় হচ্ছে ক্যাম্পিং থেকেই, এ আয় আবার বন সংরক্ষণের কাজেই ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে ক্যাম্পিং এখনও সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু আমরা যেহেতু চাকুরী করি তাঁবু উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে সেহেতু ক্যাম্পিংয়ে আমাদের অনেক আগ্রহ। কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠে না।

অফিসে আমাদের ডির্পাটমেন্ট থেকে আমরা প্রতি বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায়। সেদিন অফিসে কফি বানানোর সময় মুজিব ভাই বলল, রিপন চলেন কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
আমিও বললাম চলেন। বেড়ানোতে অনেকবার হল এইবার নাইট ক্যাম্পিংয়ে যায়।
যেই কথা সেই কাজ। সিটে বসে ইমেইলে সবাইকে জানিয়ে দিলাম আগামী সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ হাজারিখিল অভয়ারণ্যে নাইট ক্যাম্পিংয়ের জন্য যাচ্ছি।


০৮/০৯/২০১৮ইং অফিস থেকে বিকাল ৪:৩০ মিনিটে আমরা মোট ৯ জন যাত্রা করলাম হাজারিখিলের দিকে। সাথে ছিলেন মুজিব ভাই, মৃদুল দাদা, মেহেদি ভাই, সোহান, প্রিন্স, রিফাত, জুয়েল, নোমানি আর আমি। গাড়িতে অনেক মজা হল। পথে হাটহাজারী বাজার নেমে নাস্তা ও সামান্য কেনাকাটা করলাম।
আগে থেকে গাইড আষীশ ভাই কে বলে রাতের খাবারের জন্য বলে রেখেছিলাম। রাত সাড়ে ৮ টায় সেখানে গিয়ে পৌছালাম। আশিষ বাবুর এজেন্ট আমাদের রাতের অন্ধকারে বনের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি আর পোকামাকরের শব্দে গা ছমছম করতেছিল। তার পর বনের মধ্যে এক সমতল জায়গায় এসে আমরা থামলাম।
সেখানে আমাদের অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া তাঁবু গুলো স্থাপন করলাম। রাতে আড্ডা, গান, সেল্পি, বার বি কিউ এসব করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। তারপর চলে গেলাম তাঁবুর ভিতর আর খানিক পর হারিয়ে গেলাম সবাই ঘুমের রাজ্যে।

 
হাটহাজারী বাজার থেকে কেনা কলা ও পেয়ারা ভক্ষনরত।

নাইট ক্যাম্পিং করবো আর ছবি তুলবো না তা কি হয়


এতি ছবিতে মন ভরে না সেজন্য আরো একটি ছবি নিলাম
অাশীষ বাবুর ঘরে রান্না করা রাতের খাবার। ( স্বাদটা অসাধারন ছিল )

রাতে বার বি কিউ

এক দিকে আমি আর রিফাতের বার বি কিউ চিকেন তৈরী, অন্য দিকে মহাশয়দের 29 খেলা





 
পরের দিন সকাল আমাদের কমেডি বয় নোমানীর চিৎকারে ঘুম থেকে উঠা আর সেই সাথে কিছু ছবি









 











সকালের খাবার খেয়ে শুরু হল হাজারীখীল র্ঝণার উদ্দেশ্যে আমাদের রোমাঞ্চকর যাত্রা। প্রথমেই গিরিপথ এর উদ্দেশ্যে রাওনা দিলাম। বাপরে, বনজঙ্গল যে এতো ভয়ানক হবে কে জানতো?এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মাঝে পরে গেলাম। তারপর গিড়িপথ,ঝড়না, ৯০ডিগ্রি খাড়া পাহাড় সব কিছু দেখে নিলাম। প্রাই ৮ঘন্টা ট্রেকিং করলাম। ঝড়নার দিকে অসাধারন পথ দেখার পর সবাই যে চিৎকার দিলো, চিৎকার এর ফিল টাই অন্যরকম ছিলো।
আার গিড়িপথ এর কথা কি বলবো, এতো সুন্দর গিড়িপথ আমার লাইফে কখনো দেখি নাই। ৯০ডিগ্রী খাড়া পাহার এর কথা নাই বল্লাম। চা বাগান টাও দেখার মতো ছিলো। দিনশেষে সবাই মিলে পুকুরে গোসল করার মজাটাও আলাদা ।










































হাজারীখীল র্ঝণা  ঘুরে আসতে আসতে একটা বেজে গেলো। আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর সব গুছিয়ে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের দিকে।


 কি হিংসে হয় ? আপনিও যেতে চান ?

যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য হাজারিখিলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখানে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন এবং ট্রি একটিভিটিজ এর ব্যবস্থা। যার জন্য আপনাকে সাহসী হতে হবে।  সকাল হলেই করতে পারবেন ট্রি একটিভিটিজ। ট্রি একটিভিটিজ করার জন্য আপনাকে জ্যাকেট, হেলমেট সব পরিয়ে দেওয়া হবে নিরাপত্তার জন্য। চমৎকার এক এডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা হবে আপনার।


রাতে যদি তাঁবুতে থাকতে চান আপনি সোটাও করতে পাবেন। তাঁবুর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৩০ জন, তাঁবু ভাড়া পাওয়া যাবে ১০ টি।
  
যোগাযোগ:
আশীষ: ০১৮১৭২৭৩৭৪০


আর যদি আপনি এক দিনের ভিতরে এক্সট্রিম ট্রেকিং ট্যুর দিতে চান ? এলিমেন্ট হিসাবে যদি এইগুলো পান তাহলে আর কি কি লাগে বলেন,
১। টোটাল ৯ ঘণ্টার ট্রেকিং
২। চা বাগান
৩। সরু গিরিপথ
৪। তিন ঘণ্টার ঝিরিপথ
৫। অন্যরকম ঝর্না
৬। ঝর্নার পাশ দিয়ে ৮৫ ডিগ্রী খাড়া এসেডিং এবং ডিসেন্ডিং
৭। সারি সারি ১০০০ ফুট উচ্চতার কাছাকাছি পাহাড়
৮। সব শেষে বিশাল বড় একটা ঝর্না
৯। ট্রি একটিভিটিজ

যেভাবে যাবেন:

আপনি যদি চট্টগ্রাম থেকে যেতে চান তবে প্রথমে অক্সিজেন থেকে ফটিকছড়িগামী বাসে বিবিরহাট বাস স্ট্যান্ডে নামুন। সেখান থেকে লোকাল সিএনজি করে হাজারিখিল বাজারে নামলে ভাড়া জনপ্রতি ৩৫ টাকা আর যদি ফরেস্ট অফিসে নামেন তাহলে ৪০ টাকা লাগবে। ফরেস্ট অফিসে নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই ট্রি এক্টিভিটি করার জায়গা দেখিয়ে দেবে। ৫ স্টেপের এই চ্যালেঞ্জের জন্য জনপ্রতি ফি ১০০ টাকা।

আর যারা ঢাকা বা দেশের যেকোনো শহর থেকে আসতে চান, তারা চট্টগ্রাম শহরে আসার পর লালখান বাজার ফ্লাইওভার দিয়ে অক্সিজেন যেতে পারবেন বা দুই নম্বর গেইট থেকে অক্সিজেন যেতে পারবেন বা মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন যেতে পারবেন।

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

মোদের দেশের প্রিয় রাজা

মোদের দেশের প্রিয় রাজা
করে অনেক কাজ,
শুধু সংখ্যালঘুর কথা বললে
তার মাথায় পরে বাজ।

নির্যাতিতরা করেনা মামলা
রাখে রাজার সম্মান,
কিছুদিন পর, দেশছাড়া হয়ে
পায় তার প্রতিদান।

জঙ্গীরা তার ভীষণ পাজি
রাজা মশাই জানেন,
সিংহাসনের ভয়ে সদা
তাল মিলিয়ে চলেন।

নিয়ম নীতি তার অন্য রকম,
কেউ তার পর, আর কেউ আপন,
তোষামোদীর জয় জয়াকার
প্রতিবাদীর তিনি যম।

এক চোখেতে অনেক জ্যোতি
আরেক চোখ তার কানা,
আমরা তেমন পায়না কিছু
অন্যেরা পাই সোনা।

নিজেকে তুমি চালাক ভাবো
আমরা নয়তো বোকা,
আর কতদিন ওহে রাজা
মোদের দেবে ধোকা।

০৭/১১/২০১৮ইং

ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাঈ - এক তেজস্বী রাণীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা !



প্রাচীন যুগে ভারতীয় উপমহাদেশে নারীরা ছিল শিক্ষা, দীক্ষা, চেতনা মননে এগিয়ে। সে সময় ছেলেদের পাশাপাশি তাদের সমান সুযোগ ছিল সকল ক্ষেত্রে। কিন্তু এই উপমহাদেশে বিদেশি শাসকদের কাল থেকে শুরু হল অন্ধকার যুগ। প্রতি ক্ষেত্রে নারী জাগরনে আসতে লাগল বাধা। নারীদের বাধ্য করা হয় অন্তঃপুরে থাকতে। বার কারনে সমাজের সাথে সাথে নারীরাও পিছিয়ে পড়ল।

কিন্তু তার মাঝেও আঠার শতকে আমারা দেথলাম এক মহীয়ষী নারীকে, যিনি সমস্ত প্রথাকে ভেঙ্গেচুরে স্থাপন করেছেন দেশ প্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যা আমাদের কে মনে করিয়ে দেয় সেই প্রাচীন নারীদের কথা। 


যখন বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের মানুষের প্রথম সচেতন অভ্যুত্থানের আর এক নাম সিপাহি বিপ্লব। এই সিপাহি বিপ্লবের ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম। উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাঈ। লক্ষ্মী বাঈ ১৮৩৫ সালের ১৯ নভেম্বর তার জন্ম বারানসীর কাশীতে মহারাষ্ট্রের ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার প্রকৃত নাম মণি কর্ণিকা এবং ডাক নাম মনু। তার পিতা মরোপান্ত তাম্বে এবং মাতা ভগীরথি বাঈ তাম্বে। বিথুরের পেশোয়া আদালতে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন তার পিতা। সেখানে পরবর্তীতে নিজ কন্যাকে মনের মতো করে গড়ে তুলতে থাকেন মরুপান্ত তাম্বে। বাড়িতেই তার পড়াশোনা। মাত্র চার বছর বয়সে মাকে হারান লক্ষ্মীবাঈ। শৈশবে তার বয়সী মেয়েদের চেয়ে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। বাবা কোর্টের কাজ-কর্মে জড়িত থাকায় রাণী লক্ষ্মী বাঈ ঐ সময়ের অধিকাংশ নারীদের তুলনায় অধিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পেরেছিলেন। আত্মরক্ষামূলক শিক্ষালাভের পাশাপাশি ঘোড়া চালনা, আর্চারী শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি তার বান্ধবীদেরকে নিয়ে নিজস্ব একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। 

১৮৪২ সালে ঝাঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাও নিওয়াকরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন লক্ষ্মী বাঈ। এভাবেই তিনি ঝাঁসীর রাণী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বিয়ের পরই তাঁর নতুন নামকরণ হয় লক্ষ্মী বাঈ। মিষ্টি-মধুর বিবাহিত জীবনে মায়ের কোল আলো করে ১৮৫১ সালে তাদের প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম রাখা হয় দামোদর রাও। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে নিষ্ঠুর ভাগ্যের কাছে লক্ষ্মী বাঈকে বারবার পরাজিত হতে হয়েছে করুণভাবে। মায়ের কোল খালি করে মাত্র চার দিনের মাথায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তাঁর পুত্রসন্তান। পুত্র হারাবার শোক ভোলার জন্যেই পরবর্তি সময়ে গঙ্গাধর রাও-এর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আনন্দ রাও-কে দত্তক নেন এই দম্পতি। যার নাম বদলে রাখা হয় দামোদর রাও। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পুত্র হারাবার মাত্র দু’বছরের মাথায়  ১৮৫৩ সালের ২১ নভেম্বর স্বামী গঙ্গাধর রাওকেও হারান লক্ষ্মী বাঈ। আনন্দ রাওকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করার সময়ে রাজা গঙ্গাধর তৎকালিন সময়ের ব্রিটিশ পলিটিক্যাল অফিসারেকে একটি চিঠি পাঠান যে , তাঁর মৃত্যুর পর দত্তককৃত সন্তানকে যেন পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে বড় করে তোলা হয় এবং ঝাঁসির সকল দায়দায়িত্ব তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী বাঈ-এর কাছে সমর্পণ করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ-ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসী  Doctrine of Lapse প্রয়োগ করেন এবং লক্ষ্মী বাঈকে তাঁর এলাকা ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেন। 

অন্যায়-অবিচার আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক হিন্দু নারীর অসাধারণ প্রতীক হয়ে আছেন ঐতিহাসিক নারী চরিত্র ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ। সর্বসাধারণের কাছে তিনি ঝাঁসীর রাণী বা ঝাঁসী কি রাণী হিসেবেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন মোটামুটি প্রথম সফল নারী যোদ্ধা। যত দিন মানুষ জোর করে বলবে "রাণী মরগেই ন হৌউনী" ততদিন রাণীর মৃত্যূ নেই। 

১৭ জুন, ১৮৫৮ সালে ফুল বাগ এলাকার কাছাকাছি কোটাহ-কি সেরাইয়ে রাজকীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে শহীদ হন রাণী। পরবর্তীতে আরো তিনদিন পর ব্রিটিশ সেনাদল গোয়ালিয়র দখল করে। ১৮৫৮ সালের ১৭জুন তার মরদেহ ভস্ম হয়ে গিয়েছে সত্য। তবু তিনি অমর। "অমর হ্যায় ঝাঁসী কি রাণী"। যিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনোই মাথা নত করেন নি। যুদ্ধ করে, নিজের শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করে তবেই শহীদ হয়েছেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় আজীবনের জন্য স্থান করে নিয়েছেন এই রাণী। যার মৃত্যূর পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে জেনারেল হিউজ রোজ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, “রাণী তার সহজাত সৌন্দর্য্য, চতুরতা এবং অসাধারণ অধ্যবসায়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। এছাড়াও, তিনি বিদ্রোহী সকল নেতা-নেত্রীর তুলনায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিলেন।”

আজ সেই বীর নারী যোদ্ধার জন্মবার্ষিকী। তার এই জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

11/19/2018