বনে
ক্যাম্প করে তাঁবুর মধ্যে থাকা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। সাধারণত জাতীয় উদ্যানগুলোতেই ক্যাম্পিংয়ের
ব্যবস্থা করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই জাতীয় উদ্যানের মূল আয় হচ্ছে ক্যাম্পিং থেকেই,
এ আয় আবার বন সংরক্ষণের কাজেই ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে ক্যাম্পিং এখনও সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে
শুরু হয়নি। কিন্তু আমরা যেহেতু চাকুরী করি তাঁবু উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে সেহেতু ক্যাম্পিংয়ে
আমাদের অনেক আগ্রহ। কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠে না।
অফিসে
আমাদের ডির্পাটমেন্ট থেকে আমরা প্রতি বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায়। সেদিন অফিসে কফি
বানানোর সময় মুজিব ভাই বলল, রিপন চলেন কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
আমিও
বললাম চলেন। বেড়ানোতে অনেকবার হল এইবার নাইট ক্যাম্পিংয়ে যায়।
যেই কথা সেই কাজ। সিটে বসে ইমেইলে সবাইকে জানিয়ে দিলাম আগামী সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ হাজারিখিল অভয়ারণ্যে নাইট ক্যাম্পিংয়ের
জন্য যাচ্ছি।
০৮/০৯/২০১৮ইং অফিস
থেকে বিকাল ৪:৩০ মিনিটে আমরা মোট ৯ জন যাত্রা করলাম হাজারিখিলের দিকে। সাথে ছিলেন মুজিব
ভাই, মৃদুল দাদা, মেহেদি ভাই, সোহান, প্রিন্স, রিফাত, জুয়েল, নোমানি আর আমি। গাড়িতে
অনেক মজা হল। পথে হাটহাজারী বাজার নেমে নাস্তা ও সামান্য কেনাকাটা করলাম।
আগে
থেকে গাইড আষীশ ভাই কে বলে রাতের খাবারের জন্য বলে রেখেছিলাম। রাত সাড়ে ৮ টায় সেখানে গিয়ে
পৌছালাম। আশিষ বাবুর এজেন্ট আমাদের রাতের অন্ধকারে বনের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
সামনে এগিয়ে যাচ্ছি আর পোকামাকরের শব্দে গা ছমছম করতেছিল। তার পর বনের মধ্যে এক সমতল
জায়গায় এসে আমরা থামলাম।
সেখানে
আমাদের অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া তাঁবু গুলো স্থাপন করলাম। রাতে আড্ডা, গান, সেল্পি, বার
বি কিউ এসব করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। তারপর চলে গেলাম তাঁবুর ভিতর আর খানিক পর হারিয়ে
গেলাম সবাই ঘুমের রাজ্যে।
নাইট ক্যাম্পিং করবো আর ছবি তুলবো না তা কি হয় |
এতি ছবিতে মন ভরে না সেজন্য আরো একটি ছবি নিলাম |
অাশীষ বাবুর ঘরে রান্না করা রাতের খাবার। ( স্বাদটা অসাধারন ছিল ) |
রাতে বার বি কিউ |
এক দিকে আমি আর রিফাতের বার বি কিউ চিকেন তৈরী, অন্য দিকে মহাশয়দের 29 খেলা |
পরের দিন সকাল আমাদের কমেডি বয় নোমানীর চিৎকারে ঘুম থেকে উঠা আর সেই সাথে কিছু ছবি
সকালের খাবার খেয়ে শুরু হল হাজারীখীল র্ঝণার উদ্দেশ্যে আমাদের রোমাঞ্চকর যাত্রা। প্রথমেই গিরিপথ এর উদ্দেশ্যে রাওনা দিলাম। বাপরে, বনজঙ্গল যে এতো ভয়ানক হবে কে জানতো?এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মাঝে পরে গেলাম। তারপর গিড়িপথ,ঝড়না, ৯০ডিগ্রি খাড়া পাহাড় সব কিছু দেখে নিলাম। প্রাই ৮ঘন্টা ট্রেকিং করলাম। ঝড়নার দিকে অসাধারন পথ দেখার পর সবাই যে চিৎকার দিলো, চিৎকার এর ফিল টাই অন্যরকম ছিলো।
আার গিড়িপথ এর কথা কি বলবো, এতো সুন্দর গিড়িপথ আমার লাইফে কখনো দেখি নাই। ৯০ডিগ্রী খাড়া পাহার এর কথা নাই বল্লাম। চা বাগান টাও দেখার মতো ছিলো। দিনশেষে সবাই মিলে পুকুরে গোসল করার মজাটাও আলাদা ।
হাজারীখীল র্ঝণা ঘুরে আসতে আসতে একটা বেজে গেলো। আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর সব গুছিয়ে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের দিকে।
কি হিংসে হয় ? আপনিও যেতে চান ?
যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য হাজারিখিলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ
এখানে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন এবং ট্রি একটিভিটিজ এর ব্যবস্থা। যার জন্য
আপনাকে সাহসী হতে হবে। সকাল হলেই করতে পারবেন ট্রি একটিভিটিজ। ট্রি
একটিভিটিজ করার জন্য আপনাকে জ্যাকেট, হেলমেট সব পরিয়ে দেওয়া হবে নিরাপত্তার
জন্য। চমৎকার এক এডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা হবে আপনার।
রাতে যদি তাঁবুতে থাকতে চান আপনি সোটাও করতে পাবেন। তাঁবুর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৩০ জন, তাঁবু ভাড়া পাওয়া যাবে ১০ টি।
যোগাযোগ:
আশীষ: ০১৮১৭২৭৩৭৪০
আর যদি আপনি এক দিনের ভিতরে এক্সট্রিম ট্রেকিং ট্যুর দিতে চান ? এলিমেন্ট হিসাবে যদি এইগুলো পান তাহলে আর কি কি লাগে বলেন,
১। টোটাল ৯ ঘণ্টার ট্রেকিং
২। চা বাগান
৩। সরু গিরিপথ
৪। তিন ঘণ্টার ঝিরিপথ
৫। অন্যরকম ঝর্না
৬। ঝর্নার পাশ দিয়ে ৮৫ ডিগ্রী খাড়া এসেডিং এবং ডিসেন্ডিং
৭। সারি সারি ১০০০ ফুট উচ্চতার কাছাকাছি পাহাড়
৮। সব শেষে বিশাল বড় একটা ঝর্না
৯। ট্রি
একটিভিটিজ
যেভাবে যাবেন:
আপনি যদি চট্টগ্রাম থেকে যেতে চান তবে প্রথমে
অক্সিজেন থেকে ফটিকছড়িগামী বাসে বিবিরহাট বাস স্ট্যান্ডে নামুন। সেখান থেকে
লোকাল সিএনজি করে হাজারিখিল বাজারে নামলে ভাড়া জনপ্রতি ৩৫ টাকা আর যদি
ফরেস্ট অফিসে নামেন তাহলে ৪০ টাকা লাগবে। ফরেস্ট অফিসে নেমে কাউকে জিজ্ঞেস
করলেই ট্রি এক্টিভিটি করার জায়গা দেখিয়ে দেবে। ৫ স্টেপের এই চ্যালেঞ্জের
জন্য জনপ্রতি ফি ১০০ টাকা।
আর যারা ঢাকা বা দেশের যেকোনো শহর থেকে
আসতে চান, তারা চট্টগ্রাম শহরে আসার পর লালখান বাজার ফ্লাইওভার দিয়ে
অক্সিজেন যেতে পারবেন বা দুই নম্বর গেইট থেকে অক্সিজেন যেতে পারবেন বা
মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন যেতে পারবেন।