রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯

একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি। হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।"

"একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।"

পীতাম্বর দাশের  এই গানের মধ্যে দেশমাতাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য যাঁর আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে এবং যাঁর কথা উঠে এসেছে তিনি এ উপমহাদেশেরই সূর্যসন্তান, ক্ষুদিরাম।

ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিলো প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য কাজ করবার।তাঁর স্বভাবে নেশার মতো অত্যন্ত প্রবল ছিলো সৎসাহস। আর তাঁর ছিলো অন্যায় অত্যাচারের তীব্র অনুভূতি। সেই অনুভূতির পরিণতি বক্তৃতায় ছিলো না বৃথা আস্ফালনেও ছিলো না; অসহ্য দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে, প্রতিকার অসম্ভব জেনেও শুধু সেই অনুভূতির জ্বালা নিবারণের জন্য, নিজ হাতে অন্যায়ের প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে প্রতিবিধানের চেষ্টা করবার ঐকান্তিক প্রবৃত্তি ও সৎসাহস ক্ষুদিরাম চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, সময় তখন ভোর ৫টা। ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন। যারা ফাঁসিতে ঝুলাবেন তাঁরাও প্রস্তুত।লোহার গরাদ দেওয়া গেটটি তখনো বন্ধ। হঠ্যাৎ গেটটি খুলে গেল। সেই গেট পেরিয়ে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আসছেন একটি কিশোর, তিনি আর কেউ নন, ক্ষুদিরাম।

চারপাশে পুলিশ প্রহরায় কিশোর ক্ষুদিরাম এগিয়ে চলেছেন গেট থেকে একটু দূরেই ১৫ ফুট উঁচুতে তৈরি করা ফাঁসির মঞ্চের দিকে। দুই দিকে দুইটি খুঁটি আর একটি লোহার রড আড় দ্বারা যুক্ত, মাঝখানে বাঁধা মোটা এক গাছা দঁড়ি। এখানেই ঝুলানো হবে ক্ষুদিরামকে। শেষ হাসি দিয়ে মঞ্চে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ক্ষুদিরাম। জল্লাদ মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে দিল সবুজ রঙের পাতলা টুপি দিয়ে। এখন অপেক্ষা কেবল মৃত্যুর। উপস্থিত এক প্রহরীর হাত ততক্ষণে বসে আছে কোনায় স্থাপন করা হ্যান্ডেলের ওপর।উডমেন সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উড়িয়ে দিলেন তার হাতে থাকা সাদা রঙের একটি রুমাল। নিমেষের মধ্যে ক্ষুদিরাম হারিয়ে গেলেন কোনো এক অতল গহ্বরে।ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা মোতাবেক ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।

মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত ক্ষুদিরামের মনোবল ছিল দৃঢ়। ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলে, ক্ষুদিরাম এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করেই বলে উঠলেন, ‘আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই।’

এই মহাবিপ্লবীর মহাপ্রয়াণ তিথিতে জানাই প্রণাম ও বিপ্লবী অভিবাদন।

সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯

ভালবাসুন নিজের ভাষা, নিজের সংস্কৃতিকে

একটি জাতি সমৃদ্ধ হয় শিক্ষা দ্বারা। যদি কোন জাতির অগ্রযাত্রা থামাতে চাও তাহলে সে জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা ধংস করতে হবে। ঠিক যেমনটি করেছিল ব্রিটিশররা। ১৮৫৮ সালে Indian Education Act তৈরী করে। এই আইনের খসড়া তৈরী করেন Lord Macaulay. এই আইন তৈরী করার আগে তিনি সারা ভারতের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে সার্ভে করেন। যার আগেও অনেক ব্রিটিশরা ভারতের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে রিপোর্ট পাঠান।
এদের মধ্যে একজন ছিল Dr. G W Leitner ও আর একজন ছিল Sir Thomas Munro.  তারা দুজন আলাদা আলাদা জাইগায় সার্ভে করেন।
১৮২৩ সালে Dr Leitner তার রিপোর্টএ উল্লেখ করে যে তখন উত্তর ভারতে শিক্ষা হার ছিল ৯৭% আর Sir Munro যিনি উল্লেখ করেন দক্ষিন ভারতের শিক্ষার হার ছিল ১০০%.

তখন Macaulay  বলল, যদি আমরা ভারতকে গোলাম বানাতে চাই তাহলে তাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা ধংস করতে হবে আর সে জায়গা ইংলিশ শিক্ষার প্রচলন করেতে হবে। এতে করে এরা দেখতে ভারতীয় হলেও মনের দিক থেকে তারা হয়ে উঠবে ইংরেজ।

তাই Macaulay প্রথমে ভারতের সকল গুরুকুল অবৈধ ঘোষণা করেন। গুরুকুলের সাথে সংপৃক্ত সমস্তকিছু অবৈধ।এমনকি সংস্কৃত অবৈধ ঘোষণা করে।

এদেশের গুরুকুল গুলো খুজে খুজে ধংস করে। শিক্ষকদের মারধর করে জেলে প্রেরণ করে।
১৮৫০ সাল পর্যন্ত এদেশে গুরুকুল ছিল ৭.৩২ লক্ষ, আর গ্রাম ছিল ৭.৫ লক্ষ। অর্থাৎ প্রায় প্রতি গ্রামে একটি করে গুরুকুল ছিল। এসব গুরুকুল গুলোতে ১৮ টি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হত। এসব গুরুকুল সরকার নয় বরঞ্চ সমাজ দ্বারা পরিচালিত হত।

এভাবে ইংরেজরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধংস করে ইংরেজি শিক্ষাকে আইনগত শিক্ষা হিসেবে ঘোষণা করে।
 ব্রিটিশরা কলকাতাই প্রথম কনভেন্ট স্কুল চালু করে। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,  পরে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়,  পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় চালু করে।

এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে Macaulay তার বাবাকে একটা চিঠি লিখে। সেখানে তিনি লিখেন- "এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ছাত্রছাত্রী বের হবে তার দেখতে ভারতীয় হলে ও মনের দিকথেকে তারা হবে ইংরেজ। তারা জানবে না তাদের ইতিহাস জানতে পারবে না তাদের সংস্কৃতি, ভুলে যাবে তাদের পরম্পরা সম্পর্কে।
Macaulay এর লিখা চিঠির প্রমাণ পাওয়া যায় আজকের সমাজে। আমরা ইংরেজিকে নিজের মাতৃভাষা মনে করি। মনে করি ইংরেজি হল সমৃদ্ধ ভাষা। কিন্তু আসলে তা নয়।

যে ভাষাকে আমরা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে জানি। বিশ্বে মাত্র ১১টি দেশে এ ভাষার ব্যাবহার রয়েছে। শব্দগত দিক থেকে ইংরেজি গরিব ভাষা।  ইংরেজদের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেলও কিন্তু ইংরেজি ভাষার নয়। তাদের ভগবান যিশুখ্রিস্টও কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলেন নি। যদি আমরা জাতিসংঘের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, সেখানে ও ইংরেজি নয় বরং ফ্রান্সিস ভাষা চলে।
যে সমাজ নিজের মাতৃভাষা থেকে কেটে যাই, সে সমাজের কখনো ভাল কিছু হয়না।
আসুন নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখি।