"একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।"
পীতাম্বর দাশের এই গানের মধ্যে দেশমাতাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য যাঁর আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে এবং যাঁর কথা উঠে এসেছে তিনি এ উপমহাদেশেরই সূর্যসন্তান, ক্ষুদিরাম।
ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিলো প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য কাজ করবার।তাঁর স্বভাবে নেশার মতো অত্যন্ত প্রবল ছিলো সৎসাহস। আর তাঁর ছিলো অন্যায় অত্যাচারের তীব্র অনুভূতি। সেই অনুভূতির পরিণতি বক্তৃতায় ছিলো না বৃথা আস্ফালনেও ছিলো না; অসহ্য দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে, প্রতিকার অসম্ভব জেনেও শুধু সেই অনুভূতির জ্বালা নিবারণের জন্য, নিজ হাতে অন্যায়ের প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে প্রতিবিধানের চেষ্টা করবার ঐকান্তিক প্রবৃত্তি ও সৎসাহস ক্ষুদিরাম চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, সময় তখন ভোর ৫টা। ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন। যারা ফাঁসিতে ঝুলাবেন তাঁরাও প্রস্তুত।লোহার গরাদ দেওয়া গেটটি তখনো বন্ধ। হঠ্যাৎ গেটটি খুলে গেল। সেই গেট পেরিয়ে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আসছেন একটি কিশোর, তিনি আর কেউ নন, ক্ষুদিরাম।
চারপাশে পুলিশ প্রহরায় কিশোর ক্ষুদিরাম এগিয়ে চলেছেন গেট থেকে একটু দূরেই ১৫ ফুট উঁচুতে তৈরি করা ফাঁসির মঞ্চের দিকে। দুই দিকে দুইটি খুঁটি আর একটি লোহার রড আড় দ্বারা যুক্ত, মাঝখানে বাঁধা মোটা এক গাছা দঁড়ি। এখানেই ঝুলানো হবে ক্ষুদিরামকে। শেষ হাসি দিয়ে মঞ্চে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ক্ষুদিরাম। জল্লাদ মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে দিল সবুজ রঙের পাতলা টুপি দিয়ে। এখন অপেক্ষা কেবল মৃত্যুর। উপস্থিত এক প্রহরীর হাত ততক্ষণে বসে আছে কোনায় স্থাপন করা হ্যান্ডেলের ওপর।উডমেন সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উড়িয়ে দিলেন তার হাতে থাকা সাদা রঙের একটি রুমাল। নিমেষের মধ্যে ক্ষুদিরাম হারিয়ে গেলেন কোনো এক অতল গহ্বরে।ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা মোতাবেক ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।
মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত ক্ষুদিরামের মনোবল ছিল দৃঢ়। ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলে, ক্ষুদিরাম এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করেই বলে উঠলেন, ‘আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই।’
এই মহাবিপ্লবীর মহাপ্রয়াণ তিথিতে জানাই প্রণাম ও বিপ্লবী অভিবাদন।