সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

আইনে ‘মৃত্যুদণ্ড’ লিখলেই কি ধর্ষণ বন্ধ হবে ?

বিগত ১২ই অক্টোবর বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরদিন এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংশোধিত আইনটি কার্যকর করে। তবে আগে বাংলাদেশে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ, ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যুর শাস্তি প্রসঙ্গে ৯(১) ধারায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অবশ্য ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দল বেধে ধর্ষণের ঘটনায় নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা আহত হলে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা করে অর্থ দণ্ডের বিধানও রয়েছে।

সেই আইনে পরিবর্তন এনে ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধানও থাকছে। ধরনা করা হছে এতে করে ধর্ষণ কমে যাবে।

আসলে কি তাই ? শুধু আইনে ‘মৃত্যুদণ্ড’ লিখলেই কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে ? অনেকেই আশা করবেন এতে অপরাধীরা বেশি ভয় পাবে।

একজন ধর্ষক যখন এই জঘন্য কাজ করে, তখন কি তার মাথায় এটা থাকে যে এই কাজের জন্য তার মৃত্যুদণ্ড হবে না, হবে বড়জোর যাবজ্জীবন, তাই নো চিন্তা। তাই তারা ধর্ষণ করে। বর্তমান বাস্তবতায় ১৮০ দিনে জাতি ধর্ষকদের যাবজ্জীবন শাস্তি দেখে না,  ফাঁসি হলে কি তা দেখবে?

যদিও আইনে ছয় মাস বা ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা আছে। কিন্তু সেটা কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। মামলার অভিযোগ গঠনে বিলম্ব এবং ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী উপস্থিত না হওয়া, দ্রুত মামলার শুনানি শেষ না করা, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দুই থেকে পাঁচ মাস পরপর তারিখ নির্ধারণ। এতে করে ধর্ষণের শিকার একজন নারী এবং তার পরিবারকে দীর্ঘসূত্রিতার ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়।

যারা ধর্ষণ করে তারা সাধারণত ধর্ষিতার জানাশোনা বা পূর্বপরিচিত হয়ে থাকে। এখন যদি ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড করা হয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বরং এটা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়াবে। ধরুন যদি অপরাধী এটা বিবেচনায় নেয় যে মেয়েটি সাক্ষী হয়ে গেল এবং সে মুখ খুলতে পারে, তখন তাকে মেরে ফেলবে।

এদেশের আইনে অনেক অপরাধের শাস্তি  মৃত্যুদণ্ড আছে। তাই বলে কি সেই অপরাধগুলো কমেছে?

তবে আমি এই আইনের বিরোধীতা করছি না।  শধু আইন করলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।  এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসতে হবে আমাদের সমাজ থেকে। যৌনতা আমাদের অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এই স্বাভাবিক আচরণটাই যখন বিকৃত বা নোংরা রূপ নেয়, তখন-ই ধর্ষণের মত অপরাধগুলো জন্ম নেয়। কিন্তু, এই মানসিক বিকৃতির কারণগুলো প্রেক্ষিত অনুযায়ী তৈরি হয়।

সবচেয়ে কঠিন সত্যটা হচ্ছে ধর্ষণ প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশ নেয়া হয় নাই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই বিষয়টা বরাবরই উপেক্ষিত হইয়ে আসছে। তবে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ধর্ষণ প্রতিরোধে সক্ষম হতে পারি।

১। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন আনা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কারণে অনেক পুরুষেরাই মনে করে থাকেন তাদের অবস্থান নারীদের উপরে। সে কারণে নারীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার গুরুত্ব দেন না।

২। ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় তার সৌন্দর্যই আসল। ছেলেদের শেখানো হয় নারীদের সৌন্দর্যই তাকে পরিমাপের মাপকাটি। যার কারনে বাহ্যিক সৌন্দর্য সচেতন নারীরা নিজেদের বস্তু বানিয়ে ফেলছে। অথচ বাহ্যিক সৌন্দর্যের তুলনায় ব্যক্তিত্ব অধিক গুরুত্ব বহন করে। যখন নারীদেহকে একটি বস্তু মনে করা হয় তখন সেখানে ধর্ষণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।

৩। মিডিয়া এবং যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদপত্রে ধর্ষণবিরোধী প্রচারণা করতে হবে। নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানে ধর্ষণদৃশ্য বাদ দিতে হবে।

৪। ধর্ষণ বিষয়ে সন্তানদের বোঝাতে হবে এটা অপরাধ। বিশেষত ছোট ছেলেদের এই বিষয়ে সম্যক ধারণা দিতে হবে।

৪। বিজ্ঞাপণে নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রথা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। যা শুধু নারী অবমাননাই নয় নারীদেরকে বস্তু ভাবতে প্রেরনা যোগায়।

৫। নীরব দর্শক হয়ে থাকা চলবে না। আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত মেয়েদের সাথে নানা ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে। এমন কিছু দেখলে সাথে সাথে প্রতিবাদ করতে হবে।

৬। রাষ্ট্র কর্তৃক দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৭। পুরুষ মানুষ মাত্রই ধর্ষক বা সকল পুরুষকে সম্ভাব্য ধর্ষকের কাতারে ফেলে দিয়ে ধর্ষণকে পুরুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

৮। ধর্ষকদের কোনভাবে রাজনৈতিক ভাবে আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

এরকম আরো উপায় থাকতে পারে যার মাধ্যমে ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব। আমাদের সাবধানতা এবং সচেতনতাই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে।

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

সাপ লুডু খেলার ইতিহাস

খেলাটি আমারা সকলে খেলেছি। জীবনে এমন কোন ব্যাক্তিকে পাওয়া যাবে না যে একবার ও এই খেলাটি খেলেনি। খেলাটিকে আমরা বলে থাকি সাপ লুডু। ইংরেজিতে বলে থাকি Snakes and Ladders. 
শুনে অবাক হবেন যে এই খেলাটা যদিও ইংরেজদের খেলা বললেও সেটি কিন্তু আমাদের একটা প্রাচীন খেলা। এই উপমহাদেশের আবিস্কার। 


অনেক আগে ১৩শ শতাব্দীতে ঋষি জ্ঞানদেব মজার এই খেলাটি আবিষ্কার করেন, যা আজ আমরা সাপ ও মই খেলা বলে খেলি। প্রাচীনকালে এটি মোক্ষপথ নামে পরিচিত, এই খেলার একটি উল্লেখযোগ্য এবং গভীর অর্থ ছিল। সাপেরা ভাস্কর্য দেখিয়েছিল, যখন মই ভাল গুণাবলী প্রকাশ করেছিল। খেলার সারাংশ ছিল যে মই ভাল গুণাবলী লোকেদেরকে স্বর্গে নিয়ে যায় যখন সাপ অপকার মানুষকে পুনরায় জন্মের একটি চক্রের দিকে নিয়ে যায়। এমনকি দাবা প্রাচীন ভারতের একটি জনপ্রিয় খেলা ছিল।

ব্রিটিশরা যখন আমাদেরকে শাসন করে তখন তারা এই খেলাটি সম্পর্কে জানে এবং ১৮৯২ সালে এই খেলাটির রুপ একটু পরিবর্তন করে John Jacques।  ১৯৪৩ সালে ইংল্যান্ড থেকে খেলাটি আর একটু পরিবর্তন হয়ে  আমেরিকা পৌঁছায় Milton Bradley এর হাত ধরে। তখনি এই খেলার নতুন নাম হয় "সাপ ও মই" Snakes and Ladders. 

১৯৭৭ সালে দীপক সিংখাদা নামের এক যুবক শিকাগো শহরের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে বসে নেপাল এবং তিব্বতের বিভিন্ন ছবির সংগ্রহ তালিকা প্রস্তুত করছিলেন। এ সময় মিউজিয়ামের এক কোনে পড়ে থাকা এক অদ্ভুত ছবির ওপর তার দৃষ্টি চলে যায়। জাদুঘরের রেজিস্টারে ছবিটি নিয়ে শুধু বলা হয়েছে, ‘রিলিজিয়াস ওয়ার্ক’। 

ছবিটি এক ভারতীয় আর্ট ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ছবিটি দেখে দীপক বেশ অবাকই হয়। কারণ ছবির মধ্যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহাদেবের উপস্থিতি। আর জাদুঘরে এ ধরনের বিষয় নিয়ে আর কোন ছবিই চোখে পড়েনি। নানা পুথিপত্র পড়ে দীপকের কাছে বিষয়টি কেবল ধর্মীয় বিষয় বলে মনে হলো না, কেবলই তার মনে হতে লাগলো এর সাথে অন্য কোনো বিষয় জড়িয়ে আছে। তিনি বুঝতে পারলেন, ছবিটি উত্তর ভারত থেকে সংগ্রহ করা হলেও এর মূল লুকিয়ে আছে নেপালে। তার এক পরিচিত অধ্যাপক দীপককে জানালেন, এ ধরণের একটি ছবি তিনি নেপালের জাদুঘরে দেখেছেন।

এই ছবির রহস্য উন্মোচনের জন্য দীপক রওনা হলেন নেপালে। নেপালে পৌঁছেই উপস্থিত হলেন নেপালের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। মিউজিয়ামের রেজিস্টার ঘাঁটতে শুরু করলেন যদি এই বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়। রেজিস্টারে শিকাগো মিউজিয়ামে দেখা এমনই এক ছবির কথা বলা আছে। জাদুঘর থেকে সে চিত্রকর্মটি বের করা হলো। নেপালের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে পাওয়া এই চিত্রপটের নাম 'নাগপাশ'।

এই চিত্রকর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করতে গিয়ে দীপক দেখেন এটি কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়। এটি একটি খেলার ছক। নেপালিরা শুদ্ধ করে এ খেলাকে 'নাগপাশ' বললেও মুখে তারা বলেন ‘বৈকুন্ঠ খেল’। আসলে এটি আমাদের অতি পরিচিত এক খেলা ‘সাপ লুডু’।

নেপালে পাওয়া নাগপাশের ছকেও রয়েছে এই সাপ। তবে নাগপাশে দুই ধরনের সাপ দেখতে পাওয়া যায়। লাল সাপ আর কালো সাপ। লাল শুভ-লাভ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। কালো সাপ অশুভ এবং দুর্ভাগ্যের প্রতীক। নেপালি নাগপাশে লাল-সাপের লেজে গুটি পৌঁছতে পারলে খেলোয়াড়কে তা অনেক উঁচু জায়গায় পৌঁছে দেয়। আর কালো সাপের মাথায় গুটি পড়লে একেবারে লেজের শেষে নেমে যেতে হয়। 

আমরা যে সাপ-লুডু খেলি, তাতেও সাপের ব্যবহার আছে। এখানেও গুটি সাপের মাথায় পড়লে সাপের লেজের শেষে নেমে যেতে হয়। তবে এখানে উপরে উঠার জন্য লাল সাপের পরিবর্তে মই ব্যবহার করা হয়। আর তাই লাল সাপগুলো এখানে অনুপস্থিত। তবে এখনকার সাপ-লুডুতে কোথাও মই, কোথাও তীর আবার কোথাও রকেটও ব্যবহার করা হচ্ছে।

শুধু মজা পাওয়ার জন্য আমরা যেমন সাপ-লুডু খেলি, নাগপাশ খেলার উদ্দেশ্য ছিল তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।  নাগপাশ খেলার উদ্দেশ্য ছিল অনেক গভীর এবং তার সাথে কিছুটা ধর্মেরও যোগাযোগ আছে। প্রাচীনকালে এই খেলার মাধ্যমে একজন খেলোয়াড় তার কর্মফল পরিমাপ করতেন। ভালো কাজের ফল পুণ্য, মন্দ কাজের ফল পাপ। সেকালের মানুষরা বিশ্বাস করতো, মানুষের এই পাপ-পুণ্য বা শুভাশুভ ফল ভবিষ্যৎ জীবন এবং পরজন্মের জন্য সঞ্চিত হয়ে থাকে। তারা বিশ্বাস করতো, ভালো কাজ করলে স্বর্গ আর খারাপ কাজ করলে নরক ভোগ করতে হয়।

জীবিত অবস্থায় একজন মানুষ ভাল কাজ করছে না মন্দ কাজ করছে, তা নিয়ে একটা সন্দেহ তখনকার দিনের মানুষদের মধ্যে প্রবলভাবে ছিল। এই কর্মফলে বিশ্বাসী মানুষের ভাবনা থেকেই নাগপাশ খেলার জন্ম নেয়। আর সে সময়ের মানুষদের কাছে নাগপাশ হলো কর্মফল পরিমাপ করার এক মজার উপায়।

১৯৭৫ সালে হরিশ জোহারি নামের এক পণ্ডিতের লেখা বইতে দেখা যায়, নেপালের নাগপাশ খেলার প্রচলন দশম শতকে হলেও তার বহু আগে থেকেই ভারতেবর্ষে এই খেলার চল ছিল। ভারতের দিকে এর খেলার নাম ছিল ‘জ্ঞান-চৌপার’ বা ‘মোক্ষ-পতমু’, অনেকে সংক্ষেপে বলেন মোক্ষপথ। আর তখন ভারত বা নেপাল বলে আলাদা কোনো দেশ ছিল না। তবে কীভাবে এই খেলা ভারত থেকে নেপালে গেল, সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। জ্ঞান-চৌপারের খেলার উদ্দেশ্যও নাগপাশের মতোই। এখানেও ৭২টি খোপ। তবে এখানে লাল সাপের পরিবর্তে তীর বা বাণ ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীকালে যা মই বা সিঁড়ির চেহারা নিয়েছে। সাপ-লুডুর মধ্যে যে কর্মফল, আত্মজ্ঞানের কথা রয়েছে, সেসব প্রতীকি বিষয়গুলো হারিয়ে গিয়ে আজ তা নিছক খেলায় পরিণত হয়েছে। 

বিংশ শতাব্দীতে এসে সাপ-লুডু খেলাটি কোন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারিদের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে তা সার্বজনীনতার রূপ পায়। ফলে খেলাটি বিভিন্ন বয়সী মানুষদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। বর্তমান সময়ে এসে ভিডিও গেমসের কল্যাণে এই ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় খেলাটি অনেকের মোবাইল ও কম্পিউটারে স্থান করে নিয়েছে। তাই কালের বিবর্তনে খেলাটিতে নানা পরিবর্তন আসলেও এর জনপ্রিয়তা আজও অমলিন।